মহিলাদের ইহরাম বাধার নিয়ম: ইসলামী শরিয়াহর আলোকে
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি হলো হজ। আল্লাহ্ তায়ালার নির্দেশিত এই ফরজ ইবাদতকে পালনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত ও নিয়ম রয়েছে, যার মধ্যে ইহরাম অন্যতম। ইহরাম হজ ও ওমরাহর শুরুতেই বাধ্যতামূলক একটি অবস্থা, যা ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী পালন করতে হয়। মহিলাদের জন্য ইহরাম বাঁধার কিছু বিশেষ নিয়ম রয়েছে যা প্রতিটি মুসলিম নারীর জানা উচিত। ইসলামী স্কলারদের পরামর্শ এবং কুরআন-হাদিসের আলোকে নিম্নে মহিলাদের ইহরাম বাধার নিয়মাবলি তুলে ধরা হলো।
১. ইহরামের সময়ের পোষাক: মহিলাদের জন্য ইহরামের পোশাকের কোনো নির্দিষ্ট রঙ বা ধরণ নেই। তারা যেকোনো রঙের শালীন ও পরিপূর্ণ পোশাক পরতে পারেন। তবে পোশাকটি অবশ্যই ঢিলেঢালা এবং শরীরের গঠন প্রকাশ পায় না এমন হতে হবে। ইহরামের পোশাকে মুখ ও হাত ব্যতীত পুরো শরীর আবৃত থাকতে হবে। মুখ ও হাত খোলা রাখা বাধ্যতামূলক।
২. মুখ ঢাকার নিষেধাজ্ঞা: ইহরামের সময় মহিলাদের জন্য মুখ ঢাকার অনুমতি নেই। তবে যদি কোনো কারণে পুরুষদের সামনে আসতে হয়, তবে মুখের সামনে কিছুটা কাপড় ধরে রাখা যেতে পারে, যা সরাসরি মুখের উপর না লাগে।
৩. সুগন্ধি ব্যবহার নিষিদ্ধ: ইহরামের আগে বা পরে কোনো ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। শরীরে, পোশাকে বা চুলে কোনো সুগন্ধি থাকা উচিত নয়। ইহরামের আগেই যদি সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়ে থাকে তবে তা ধুয়ে ফেলা আবশ্যক।
৪. পায়ের আবরণ: মহিলাদের জন্য ইহরামের সময় পা আবৃত থাকা বাধ্যতামূলক। এজন্য তারা মোজা বা জুতা ব্যবহার করতে পারেন যা পায়ের উপরের অংশ আবৃত রাখে।
৫. চুল এবং নখ কাটা: ইহরাম বাঁধার আগে মহিলাদের চুল ও নখ কাটা সুন্নত। তবে ইহরাম বাঁধার পর থেকে চুল বা নখ কাটার অনুমতি নেই যতক্ষণ পর্যন্ত না হজ বা ওমরাহ সম্পূর্ণ হয়।
৬. নিয়ত এবং তালবিয়া পাঠ : ইহরামের জন্য মহিলাদের নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করা আবশ্যক। তালবিয়া হচ্ছে: لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ"হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট হাযির হয়েছি, তোমার কাছে হাযির হয়েছি, তোমার দরবারে উপস্থিত আছি। তোমার কোন শারীক নেই, আমি তোমার সমীপে উপস্থিত হয়েছি। যাবতীয় প্রশংসা ও নি’আমাত তোমারই এবং সমগ্র রাজত্ব ও সার্বভৌম কর্তৃত্ব তোমার। তোমার কোন শারীক নেই।এর মাধ্যমে হজ বা ওমরাহর নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হয়।
৭. মাসিক চক্র এবং ইহরাম: মাসিক চক্র চলাকালীন মহিলাদের জন্য ইহরাম বাঁধা নিষিদ্ধ নয়। তারা অন্যসব বিধানের মতোই ইহরাম বাঁধতে পারেন, তবে তাওয়াফে কা'বা (কাবা শরিফের প্রদক্ষিণ) করতে পারবেন না যতক্ষণ না তাদের মাসিক চক্র শেষ হয় এবং তারা পূর্ণ পবিত্রতা অর্জন করেন।
ইসলামী স্কলারদের দৃষ্টিভঙ্গি:
ইসলামী স্কলাররা মহিলাদের ইহরাম বাধার ক্ষেত্রে উল্লেখিত নিয়মগুলোকে গুরুত্বসহকারে অনুসরণ করার পরামর্শ দেন। শরিয়াহ অনুযায়ী ইহরাম বাধার মাধ্যমে মহিলারা তাদের হজ ও ওমরাহর প্রতিটি কাজ সঠিকভাবে পালন করতে পারেন। ইসলামী স্কলারদের মতে, ইহরাম বাঁধার সময় মহিলাদের পরিপূর্ণ পর্দা এবং শালীনতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইহরাম হজ এবং ওমরাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা সঠিকভাবে পালন করা প্রতিটি মুসলিম নারীর জন্য আবশ্যক। ইসলামী শরিয়াহ এবং স্কলারদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ইহরাম বাঁধার নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে মহিলারা তাদের হজ বা ওমরাহ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারেন। তাই, হজ বা ওমরাহর আগে প্রতিটি নারীকে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে যথাযথভাবে জেনে নেওয়া উচিত এবং তা পালন করা উচিত
Comments
Customer reviews
0 out of 5