### হজ (Hajj)
হজ এমন একটি ধর্মীয় আচার যা সমস্ত মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক, যতক্ষণ তারা শারীরিক, মানসিক, এবং আর্থিকভাবে সক্ষম হন। জীবনের অন্তত একবার আল্লাহর ঘর কাবা ঘুরে দেখা বাধ্যতামূলক। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ৩-৪ মিলিয়ন হজযাত্রী মক্কায় এই বৃহত্তম হজযাত্রা পালন করেন, যা পৃথিবীর মানুষের একক বৃহত্তম সমাবেশে পরিণত হয়।
হজ হল ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। তাই হজযাত্রা একজন মুসলিমের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ওমরাহর চেয়েও বৃহত্তর ধর্মীয় তাত্পর্য রয়েছে। এটি আধ্যাত্মিক ও ফলপ্রসূ কাজের মধ্যে অন্যতম, যার মাধ্যমে একজন ইমানদ্বার মুসলিমের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক আরও গভীর হয়। আল্লাহর দরবারে একবার হজ কবুল হলে, অতীতের সমস্ত পাপ আল্লাহর রহমতে মাফ হয়ে যায় এবং তার জান্নাতে পৌঁছানোর রাস্তা প্রসস্ত হয়।
ইসলামিক ক্যালেন্ডারের জিলহজ মাসে হজ অনুষ্ঠিত হয়। এই মাসের ৯ থেকে ১৩ তারিখ হজের নির্দিষ্ট সময়। বছরের অন্য কোনো মাসে বা সময়ে হজ পালন করা যায় না।
হজের সময়, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আনুগত্য অর্জনে প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের জন্য তিনটি ফরয পালনীয়। হজের তিনটি ফরয হল:
*ইহরাম:* হজের প্রথম ফরয। ইহরাম অর্থ বারন করা, এবং এর মাধ্যমে হজ শুরু হয়। হজযাত্রীদের অবশ্যই ইহরাম অবস্থায় থাকতে হবে। ইহরাম একটি ব্যবস্থাপনা, যেখানে যৌন ক্রিয়াকলাপে অংশ না নেওয়া, লড়াই না করা এবং পাপাচার থেকে বিরত থাকা বাধ্যতামূলক। তারা সাদা পোশাক পরেন, যা পবিত্রতা, সাম্যতা, এবং ঐক্যের প্রতীক।
*উকুফে আরাফা:* হজের দ্বিতীয় ফরয। এটি ৯ই জিলহজ্জের দ্বিপ্রহর বা দুপুরের পর থেকে ১০ই জিলহজ্জ সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত আরাফার ময়দানে উপস্থিত থাকা।
*তাওয়াফ:* হজের তৃতীয় এবং শেষ ফরয। এ সময় হাজীরা মসজিদ আল-হারামে অবস্থিত পবিত্র কাবাগৃহের চারদিকে সাতবার তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।
হজের ছয়টি ওয়াজিব রয়েছে:
* সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে ৭ বার সায়ি করা।
*মুযদালিফায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান করা।
* মিনায় তিন শয়তান (জামারাত) সমূহকে পাথর নিক্ষেপ করা।
*হজে তামাত্তু ও কিরানকারীরা হজ সমাপনের জন্য দমে শোকর করা।
* এহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল কাটা।
*মক্কার বাইরের লোকদের জন্য বিদায়ের সময় তাওয়াফে বিদা করা।
এছাড়াও হজের অন্যান্য আমলগুলি সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব।
### *ওমরাহ (Umrah)*
ইসলামে নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর জিয়ারত করাকে ওমরাহ বলা হয়। ওমরাহ পালনের নিয়ম হল: ইহরাম বাধা, তালবিয়া, ক্বাবা শরীফের চারপাশে তাওয়াফ করা, সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সায়ি করা এবং মাথা মুণ্ডানো বা চুল কাটা।
### *হজ এবং ওমরাহর মধ্যে পার্থক্য*
হজ এবং ওমরাহর মধ্যে অনেক ধরনের পার্থক্য বিদ্যমান, যা মূলত গুরুত্ব এবং পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে।
*প্রত্যেক শারীরিকভাবে উপযুক্ত এবং আর্থিকভাবে সক্ষম মুসলমানের জন্য হজ ফরজ। অপরদিকে, ওমরাহ পালন করা সুন্নত।
* হজ একটি নির্দিষ্ট সময়ে পালন করা হয়, কিন্তু ওমরাহ বছরের যে কোনো সময় পালন করা যায়। তবে ৯ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত ওমরাহ করা মাকরূহ।
*হজে আরাফাত ও মুযদালিফায় অবস্থান, দুই নামায একসাথে আদায় করা এবং খুতবার বিধান রয়েছে। ওমরাহর মধ্যে এসব বিধান নেই।
*হজে জামরাতুল আকাবাহতে রামী (কংকর নিক্ষেপ) করা হয়, আর ওমরাহতে তাওয়াফ আরম্ভ করার সময় তালবিয়া পড়া মওকুফ করা হয়।
* হজ কোনো কারণে নষ্ট হলে পরবর্তী বছর পুনরায় তা সম্পন্ন করতে হয়। ওমরাহ নষ্ট হলে বা জানাবতের অবস্থায় তাওয়াফ করলে (দম হিসেবে) একটি ছাগল বা মেষ জবেহ করা যথেষ্ট।
Comments
Customer reviews
0 out of 5